সারাদেশ

নেত্রকোণায় রোপা আমন কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরা, ভালো ফলনে মুখে হাসি

আপডেট: নভে ১৮, ২০২৫ : ০৫:৫৩ পিএম
নেত্রকোণায় রোপা আমন কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরা, ভালো ফলনে মুখে হাসি

নেত্রকোণায় এখন রোপা আমন কাটার ধুম। জেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকেরা মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফলন ভালো হওয়া এবং বাজারে ধানের অনুকূল দাম থাকায় কৃষকের মুখে এবার স্বস্তির হাসি।

জেলায় এ বছর ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে। হাওরবেষ্টিত মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুড়ির অধিকাংশ জমি পানিতে ডোবা থাকায় বাকি সাতটি উপজেলায় আমন চাষই মূল ভরসা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলেও ভাইরাস ও পোকার আক্রমণে কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে বৃষ্টির পানি থাকায় সেচ ব্যয় না থাকায় কৃষকের উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম হয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় আগেভাগে কাটামোড়াই দুর্গাপুর ও কলমাকান্দায় আগেই চারা রোপণের কারণে সবার আগে ধান কাটাও শুরু হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে—পাহাড়ের পাদদেশে কৃষকেরা রোদে পিঠে আমন কাটছেন, কিষানিরা ঘরে নতুন ধান তোলার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। কোথাও সিদ্ধ ধান শুকোচ্ছে রোদে, কোথাও খড় শুকানো চলছে, আবার সীমান্ত সড়কের ধারে মহিলারা ধান ও চালের চাতাল সাজাচ্ছেন।

জেলার গ্রামগুলোতে নতুন ধান তোলা মানেই উৎসবের আমেজ। ধান কাটা, মাড়াই, সিদ্ধ—সবই হয় সমবেতভাবে। নতুন ধানের চাল দিয়ে পিঠা-পুলি বানাতে ব্যস্ত থাকেন কিষানিরা। কিষানিদের শ্রম ও অংশগ্রহণই এই কৃষি উৎসবের বড় অংশ। “নতুন ধান এলে ঘরে আনন্দ”—কিষানির গল্প সদর উপজেলার উলুয়ারাটি গ্রামের কিষানি রেহানা পারভীন বলেন, “ধান কাটার পর থেকেই কাজের চাপ বেড়ে যায়—উঠান প্রস্তুত, শুকানো, সিদ্ধ করা, মাড়াই—সব আমরা মিলে করি। পরিশ্রম বেশি, কিন্তু আনন্দও বেশি।”
কালিকাপুর গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম জানান, ২০ কাঠা জমিতে রোপা আমন করেছেন। প্রতি কাঠায় পাচ্ছেন প্রায় ৪ মণ ধান। বাতাসে কিছু ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়ায় কিছু ক্ষতি হয়েছে। একই গ্রামের কৃষক নূরুল ইসলাম জানান, “এবার সেচ খরচ না থাকায় লাভ বেশি হবে।” ভালো দাম—কৃষকের প্রত্যাশা
বাজারে এখন কাঁচা ধান প্রতি মণ ১,০০০–১,১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ধান ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম মনে করেন, শুকানোর পর দাম আরও বাড়তে পারে। তিনি বলেন, “কৃষকেরা এবার ভালো দাম পাবেন বলে আশা করছি।”

শ্রমিক সংকট, ভরসা হারভেস্টার ধান কাটার শ্রমিক সংকটও ভুগাচ্ছে কৃষকদের। অনেকে ধান কাটার কাজ ছেড়ে শহরমুখী হওয়ায় আগের মতো শ্রমিক মিলছে না। শ্রমিক পাওয়া গেলেও মজুরি কৃষকের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। ফলে অনেকেই ঝুঁকছেন হারভেস্টারের দিকে। কাঠাপ্রতি ৫০০ টাকায় এসব মেশিনে ধান কাটা যাচ্ছে—যা কৃষকের সময় ও পরিশ্রম দুটোই কমাচ্ছে। “জমির ১৬ শতাংশে কাটা শেষ”—কৃষি বিভাগের তথ্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম জানান, “জেলায় রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ হেক্টর। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৩ হাজার ৯৩ হেক্টর, অর্থাৎ মোট জমির ১৬ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে।”
এ বছর জেলায় ব্রি ধান–৪৯, ৭১, ৭৫, ৮৭, ১০৩, ধানী গোল্ডসহ বিভিন্ন জাতের আবাদ হয়েছে। পাশাপাশি বিনা ধান–৭ ও ১৭–ও চাষ হয়েছে। কৃষকেরা আশানুরূপ ফলন পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

উপপরিচালক আরও বলেন, “হাওরের ডুবন্ত জমি জেগে উঠছে। রবি শস্য উৎপাদনে কৃষকদের কারিগরি সহায়তা দেওয়া হবে।” রোপা আমনের ভালো ফলন, শ্রমিক সংকটের মধ্যেও হারভেস্টারের ব্যবহার, আর বাজারে অনুকূল দামের কারণে নেত্রকোণার কৃষকেরা এখন এক ব্যস্ত কিন্তু আনন্দঘন মৌসুম পার করছেন।


আরএস

০ মন্তব্য


No comments yet. Be the first to comment!