বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কনভেনশন অনুস্বাক্ষর করার পর এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নির্ধারণে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এ সভার আয়োজন করে গণসাক্ষরতা অভিযান (CAMPE)। সহযোগিতা করে অক্সফাম ইন বাংলাদেশ।
সভায় সভাপতিত্ব করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি বলেন, “আগামী ২০ নভেম্বর আইএলও-এর সাধারণ সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করব। আমাদের উদ্যোগ যেন শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে, সে লক্ষ্যেই কাজ করছি। আইন প্রণয়নই শেষ নয়, সেটি বাস্তবায়ন করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, অনেক গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। বেক্সিমকো এক ব্যাংক থেকেই ২৭ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। আবার নাসা গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠানকে শুধু শ্রমিকদের জন্য টিকিয়ে রাখতে হয়েছে। “শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে মালিকদের সম্পদ বিক্রিও করতে হয়েছে। এখানে মালিক-শ্রমিক উভয়েরই দায়িত্ব রয়েছে।”
সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও ক্যাবের চেয়ারপারসন এএইচএম সফিকুজ্জামান, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান ও বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ, নারী সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক, আইএলও প্রোগ্রাম ম্যানেজার নিরান রামজুথান, অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশিষ দামলে, প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাহমুদা সুলতানা এবং বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাসলিমা আখতার।
সভায় আলোচনাপত্র উপস্থাপন করেন অক্সফাম ইন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর তারেক আজিজ। তিনি জানান, ২০২৫ সালে বাংলাদেশ সরকার আইএলও-এর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কনভেনশন — C155 (Occupational Safety and Health), C187 (Promotional Framework for OSH) এবং C190 (Violence and Harassment) — অনুস্বাক্ষর করেছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ সংশোধন করে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে এ তিনটি কনভেনশন একত্রে অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করেছে।
তারেক আজিজ বলেন, নতুন সংশোধনীতে শ্রমিকদের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করা হয়েছে। গৃহকর্মী ও নাবিকদের “শ্রমিক” হিসেবে স্বীকৃতি, ৫০ জনের বেশি শ্রমিক থাকলে নিরাপত্তা কমিটি গঠন, নারী শ্রমিকদের সমান মজুরি ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধ, মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২০ দিনে বৃদ্ধি, বাধ্যতামূলক প্রভিডেন্ট ফান্ড ও সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণের সুযোগসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আনা হয়েছে।
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা সরকারকে কনভেনশন অনুস্বাক্ষরের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি জোরদার করার আহ্বান জানান। তাঁরা বলেন, শ্রমিক ও নিয়োগকর্তাদের সচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো প্রয়োজন।
আলোচনায় আরও প্রস্তাব আসে—গৃহকর্মীদের শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্তি, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আদালতের রায়কে আইনে পরিণত করা, নারী শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য দূর করা, কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ এবং শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন করা।
সভায় গৃহকর্মী, শ্রমিক সংগঠন, গবেষক, এনজিও প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মীসহ সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন
No comments yet. Be the first to comment!