অসুস্থ, অক্ষম বা দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য শারীরিক অসুবিধার সময় দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করাই বাধ্যতামূলক নয়; বরং দয়াময় রব তাদের জন্য যথাযথ সহজীকরণ রেখেছেন। এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) বর্ণনা করেছেন—
‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি অর্শরোগী ছিলেন, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বসে সালাত আদায়কারী ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেন: যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করল সে উত্তম আর যে ব্যক্তি বসে সালাত আদায় করল তার জন্য দাঁড়ানো ব্যক্তির অর্ধেক সওয়াব; আর যে শুয়ে সালাত আদায় করল, তার জন্য বসে সালাত আদায়কারীর অর্ধেক সওয়াব।
আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহ.) বলেন, আমার মতে এ হাদিসে نَائِمًا (ঘুমন্ত) এর দ্বারা مُضْطَجِعًا (শায়িত) অবস্থা বুঝানো হয়েছে। (বুখারি, হাদিস : ১১১৬)
হাদিসের ব্যাখ্যা
এই হাদিসটি সালাতের গুরুত্ব এবং ইবাদতে সহজীকরণের মহান নীতি দুটোই পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে। ইসলামে সালাত শুধু একটি আনুষ্ঠানিক ইবাদত নয়; বরং একজন মুমিনের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা মূল ও সর্বোত্তম রূপ—যা আল্লাহর কোরআনি আদেশেরও প্রতিফলন।
তাই শরীরিকভাবে সক্ষম ব্যক্তি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলে তার সওয়াব সর্বাধিক হয়। কিন্তু এর পাশাপাশি ইসলাম মানুষের সামর্থ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। অসুস্থতা, ব্যথা বা সীমাবদ্ধতার কারণে কেউ যদি দাঁড়াতে না পারে, তবে সে বসে সালাত আদায় করতে পারে—এতে সালাত নষ্ট হয় না। শুধু দাঁড়ানোর তুলনায় সওয়াব কিছুটা কমে, কারণ শারীরিক পরিশ্রম ও সম্পূর্ণ আকারে ইবাদতের সৌন্দর্য ততটা থাকে না।
আর যদি কেউ বসার শক্তিও না পায়, তবে শুয়ে সালাত আদায় করলেও তা গ্রহণযোগ্য। এভাবে ধাপে ধাপে সওয়াব কমে—দাঁড়ানো থেকে বসা থেকে শোয়া। তবে কোনো অবস্থাতেই আল্লাহ তার বান্দাকে ইবাদত থেকে বঞ্চিত করেন না। হাদিসের শেষাংশে ইমাম বুখারির মন্তব্য (نَائِمًا / শায়িত) নির্দেশ করে যে অসুস্থ-অক্ষম ব্যক্তির শোয়া অবস্থায় সালাত আদায় করাও শরীয়তের স্বীকৃত। এই হাদিসের সারমর্ম হলো: সালাতের গুরুত্ব অটুট; কিন্তু ইসলাম কঠোরতাকে নয়, বরং সহজতাকে প্রাধান্য দেয়।
আল্লাহ মানুষের কষ্ট চান না; বরং সামর্থ্য অনুযায়ী ইবাদত করার সুযোগ দেন। যে যতটুকু সম্ভব আল্লাহর সামনে দাঁড়ায়, বসে বা শুয়ে ইবাদত করে—ততটাই তার জন্য সওয়াব লিপিবদ্ধ হয়।
আরএস
No comments yet. Be the first to comment!