দেশে গত এক যুগে ফল উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫০ লাখ টন। এখন বছরে দেড় কোটি টনের বেশি ফল উৎপাদিত হয়, যা ২০১৩–১৪ অর্থবছরে ছিল এক কোটি টনের কিছু কম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, ফলের বাণিজ্যিক চাষ বাড়ায় উৎপাদনে এসেছে টেকসই ও ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি। আম, লিচু, কলা ও আনারসসহ বেশ কয়েকটি ফলের উৎপাদন বেড়েছে, কমেছে কাঁঠাল ও নারিকেল।
উৎপাদনে ধারাবাহিক বৃদ্ধি:- ২০২৪–২৫ অর্থবছরে দেশে ফল উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ ৩৩ হাজার টন। এক যুগ আগে ২০১৩–১৪ অর্থবছরে উৎপাদন ছিল ৯৯ লাখ ৭২ হাজার টন। এ সময়ে ফলচাষের জমি বেড়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার থেকে ৭ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টরে।
২০১৪–১৫ থেকে ২০২৩–২৪ পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছরই ফল উৎপাদন ধীরে ধীরে বেড়েছে। গত অর্থবছরে উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৪৮ লাখ টন।
কোন ফল বেড়েছে, কোনটা কমেছে:- কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, দেশে প্রধান দশটি ফলের মধ্যে আম, জাম, লিচু, কলা, বরই, পেঁপে, পেয়ারা ও আনারসের উৎপাদন বেড়েছে। এক যুগে (২০১২–১৩ থেকে ২০২৩–২৪): আমের উৎপাদন বেড়েছে ১৫ লাখ টন থেকে ২৫ লাখ টনে লিচু ১ লাখ ১৯ হাজার থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টন কলা ১৫ লাখ থেকে ২৪ লাখ ৩৮ হাজার টন, আনারস ২ লাখ ৩৯ হাজার থেকে ৫ লাখ ৮০ হাজার টন, পেঁপে, পেয়ারা, বরই, জামের উৎপাদনও বেড়েছে অন্যদিকে, কাঁঠালের উৎপাদন ৩২ লাখ টন থেকে কমে ১৮ লাখ টনে, আর নারিকেল ৫ লাখ ৯১ হাজার থেকে কমে ৫ লাখ ৫ হাজার টনে নেমেছে।
উদ্যানতত্ত্ববিদ মো. মইনুল হক বলেন, “কাঁঠাল খাওয়ার বিষয়ে মানুষের অনীহা রয়েছে। বাণিজ্যিক চাষাবাদ না হওয়ায় উৎপাদন কমছে।” বিদেশি ফলের চাষও বাড়ছে ড্রাগন, স্ট্রবেরি ও মাল্টাসহ কয়েকটি বিদেশি ফলের উৎপাদন দেশে দ্রুত বাড়ছে। গত তিন বছরে ড্রাগনের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ। ২০২১–২২ সালে উৎপাদন: ১৩,৮৭২ টন ২০২৩–২৪ সালে উৎপাদন: ৬৮,৮১৩ টন এ ছাড়া স্ট্রবেরি ও মাল্টার বাগানও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। মাল্টার উৎপাদন ২০১৮–১৯ অর্থবছরের ১৭ হাজার টন থেকে এখন ৮৪ হাজার টনের বেশি। রাম্বুটান, অ্যাভোকাডো, পার্সিমনসহ আরও কয়েকটি বিদেশি ফল এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে।
ফল আমদানির চিত্র: দেশে উৎপাদন বাড়লেও চাহিদা মেটাতে ৩৮ ধরনের ফল এখনো আমদানি করা হয়। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে বিদেশি ফল আমদানিতে খরচ হয়েছে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। ২০২২–২৩ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল: আপেল: ১ লাখ ৭০ হাজার টন কমলা: ১ লাখ ৯৪ হাজার টন আঙুর: ৯৫ হাজার টন ড্রাগন: ৪৯০ টন
ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আমদানি খরচ বেড়েছে। ফলে বিদেশি ফলের ওপর নির্ভরতা কমছে।”
আরেকটি নতুন প্রকল্পের পরিকল্পনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প’-এর কারণে দেশে ফল উৎপাদন বেড়েছিল উল্লেখযোগ্যভাবে। প্রকল্পটি শেষ হলেও এর আদলে নতুন প্রকল্প নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সাবেক প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হালিম বলেন, দেশি ফল উৎপাদন বাড়ায় বিদেশি ফল আমদানিনির্ভরতা কমেছে। ফল চাষে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে, বাণিজ্যিক কার্যক্রমও বাড়ছে।
আরএস
No comments yet. Be the first to comment!