দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চলা ঐতিহ্যের অবসান ঘটাতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ব্যয় সাশ্রয় ও ডিজিটাল লেনদেনের যুগে তাল মেলাতে দেশটি এক সেন্ট মূল্যমানের মুদ্রা ‘পেনি’ উৎপাদন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
গতকাল বুধবার (১২ নভেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি-এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, স্থানীয় সময় বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া মিন্টে পেনির শেষ ব্যাচের মুদ্রা তৈরি হবে। এর মধ্য দিয়ে ১৭৯৩ সাল থেকে টানা ২৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা পেনি উৎপাদনের অধ্যায় শেষ হবে।
তবে উৎপাদন বন্ধ হলেও ইতোমধ্যে প্রচলনে থাকা মুদ্রাগুলো বৈধ ও কার্যকর থাকবে। তবুও নতুন উৎপাদন বন্ধের ঘোষণার পর থেকেই অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দাম সমন্বয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে, কারণ বাজারে এখন পেনি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরকার বলছে, এই পদক্ষেপে প্রতি বছর প্রায় ৫৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয় সাশ্রয় হবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বলেন, আমাদের মহান দেশের বাজেট থেকে অপচয় দূর করতে হবে— তা এক পেনি হলেও। তামা-প্লেটেড জিঙ্ক দিয়ে তৈরি এবং গৃহযুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের প্রতিকৃতি সংবলিত এই মুদ্রা তৈরি করতে বর্তমানে খরচ হয় প্রায় ৪ সেন্ট— অর্থাৎ এর মূল্যমানের চারগুণ।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, ডিজিটাল লেনদেনের প্রসারে এক সেন্টের মুদ্রা ক্রমেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। বর্তমানে বাজারে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন পেনি রয়েছে— যা বাণিজ্যিক প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি।
এক সরকারি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত মুদ্রার প্রায় ৬০ শতাংশই ঘরে জমে পড়ে থাকে— প্রতি পরিবারে গড়ে ৬০ থেকে ৯০ ডলারের মতো অব্যবহৃত কয়েন রয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্তে ভোক্তারা সামান্য অতিরিক্ত খরচের মুখে পড়তে পারেন। কারণ পণ্যের দাম পূর্ণ সংখ্যায় সমন্বয় করতে গিয়ে প্রতি বছর প্রায় ৬ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত ব্যয় হতে পারে, জানায় রিচমন্ড ফেডারেল রিজার্ভের এক গবেষণা।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বিশ্বের অনেক দেশই আগেই স্বল্পমূল্যের মুদ্রা বাতিল করেছে। কানাডা ২০১২ সালে এক সেন্টের কয়েন উৎপাদন বন্ধ করে। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ১৯৯০-এর দশকে এক ও দুই সেন্টের কয়েন বাতিল করে, নিউজিল্যান্ড ২০০৬ সালে পাঁচ সেন্টের মুদ্রাও বন্ধ করে দেয়। যুক্তরাজ্য ২০২৪ সালে ১ ও ২ পেনি কয়েন তৈরি বন্ধ করে ডিজিটাল লেনদেনের সঙ্গে সামঞ্জস্য আনে।
এদিকে, এখন যুক্তরাষ্ট্রে নজর পড়েছে পাঁচ সেন্ট মূল্যের ‘নিকেল’ মুদ্রার দিকে, যার উৎপাদন খরচ প্রায় ১৪ সেন্ট— অর্থাৎ মূল্যমানের তিনগুণেরও বেশি। একে বাতিল করা হলে ভোক্তাদের বছরে প্রায় ৫৫ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত ব্যয় হতে পারে বলে জানিয়েছে রিচমন্ড ফেড।
আরএস
No comments yet. Be the first to comment!