জীবনধারা

পর্যটকশূন্য সেন্টমার্টিনে সাড়ে ৯ হাজার মানুষের মানবেতর জীবন

আপডেট: নভে ১৭, ২০২৫ : ০৬:৪৮ এএম
পর্যটকশূন্য সেন্টমার্টিনে সাড়ে ৯ হাজার মানুষের মানবেতর জীবন

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে দেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। তবে জাহাজ চলাচল না হওয়ায় দ্বীপটি এখন সম্পূর্ণ পর্যটকশূন্য, নীরব ও নিঃসঙ্গ। একসময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন শত শত পর্যটক দ্বীপটি ভিড় করতেন।

পর্যটক অনুপস্থিতিতে হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট, দোকানপাট এবং পরিবহন সবখানেই স্থবিরতা নেমে এসেছে। দ্বীপের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত জেটিঘাট এখন জনশূন্য। স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, “আমার তিনটি দোকান আছে, কিন্তু এখন কর্মচারীদের বেতন দেওয়াও কঠিন। একবেলা খেলে আরেকবেলা খাওয়া হয় না।” স্থানীয় বাসিন্দা আরিফ উল্লাহও জানান, “গত বছর দুই মাসের পর্যটন মৌসুমের আয়ের ওপর নির্ভর করে সংসার চলেছে, এখন সব আয়ের পথ বন্ধ।” ইজিবাইক চালক মোহাম্মদ কেফায়েত বলেন, “পর্যটক না থাকায় গাড়ি চালালেও ব্যাটারি চার্জের খরচ উঠছে না। আয় হচ্ছে দিনে মাত্র ২০০ টাকা।” দ্বীপে বর্তমানে দুই শতাধিক হোটেল, মোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে, তবে পর্যটক না থাকায় সবকিছু প্রায় বন্ধ। সী প্রবাল বিচ রিসোর্টের পরিচালক আব্দুল মালেক বলেন, “বুকিং নেই, কর্মচারীরা বেকার বসে আছে। জাহাজ কবে চলবে, তা অনিশ্চিত।”

সেন্টমার্টিন হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি এম এ রহিম জিহাদী বলেন, “সরকারি নির্দেশনায় নভেম্বর থেকে দ্বীপে যাওয়া যাবে, কিন্তু রাত্রীযাপনের অনুমতি নেই। এতে পর্যটকদের আগ্রহ কমেছে। জাহাজ না চলায় পুরো দ্বীপের মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে।”
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম জানান, মানুষের আয় পুরোপুরি বন্ধ। অনেকেই দ্বীপ ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন, যারা আছেন তারা কষ্টে দিন পার করছেন। দ্রুত জাহাজ চলাচল শুরু না হলে বড় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
পরিবেশবিদরা মনে করেন, অতিরিক্ত পর্যটন ও অব্যবস্থাপনা সেন্টমার্টিনের পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তাই টেকসই পর্যটনের জন্য সীমাবদ্ধতা জরুরি, কিন্তু বাসিন্দাদের জীবিকা রক্ষায় সুষম নীতি গ্রহণ করা উচিত।

প্রায় ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ক্ষুদ্র দ্বীপে সাড়ে ৯ হাজার মানুষ বসবাস করেন। প্রবাল, নারিকেল গাছ ও নীল জলরাশিতে ভরপুর সেন্টমার্টিন এখন নীরব ও অনিশ্চিত। দ্বীপবাসীর মুখে একটাই প্রশ্ন—‘কবে আবার ফিরবে প্রাণচঞ্চল পর্যটনের দিনগুলো?’
কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) থেকে সেন্টমার্টিন পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ইনানী ঘাট থেকে কোনো জাহাজ চলাচল করা যাবে না।
সেন্টমার্টিনের পর্যটন উদ্যোক্তা হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, দিনের মধ্যে যাত্রা-ফেরার বাধ্যবাধকতায় পর্যটকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে রাত্রীযাপনের সুযোগ থাকায় ১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ স্বাভাবিকভাবে চলাচল করবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, পর্যটন বিধিনিষেধ শিথিল হলে দ্বীপবাসী ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।


আরএস

Tags:
সেন্টমার্টিন

০ মন্তব্য


No comments yet. Be the first to comment!