বন্দরনগরী চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ড ও সশস্ত্র সূত্রে প্রকাশ্যে আতঙ্কের ঘটনাগুলি রোধে মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ আজ (মঙ্গলবার) সব টহলকারী ও থানা পুলিশকে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। ওয়্যারলেসে দেওয়া বার্তায় তিনি বলেন, আগ্নেয়াস্ত্র বহনকারী ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা দেখা মাত্র সাবমেশিন গান (এসএমজি) ব্যবহার করে ‘ব্রাশফায়ার’ করা হবে। তবে এই নির্দেশনা কোনো নিরস্ত্র লোকের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হবে না বলে কমিশনার জোর দিয়ে নিশ্চিত করেছেন।
কমিশনারের একাধিক সূত্রে জানানো হয়, মঙ্গলবার দুপুরে তিনি বারবার ওয়্যারলেস সেটে টহল ও থানার পুলিশকে নির্দেশ দেন—“শটগান হবে না, চায়না রাইফেলও বাদ, এখন এসএমজি ব্রাশফায়ার মুডে থাকবে।” একই সঙ্গে টহল ও অভিযানে শিশা শটগান, দুইটি গ্যাস গান ও নাইন এমএম পিস্তল বহনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্থায়ী চেকপোস্টের সংখ্যা সাতটি থেকে বাড়িয়ে ১৩টি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সূত্ররা জানান, গত ৫ নভেম্বর বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলীর খন্দকারপাড়া এলাকায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর গণসংযোগে সন্ত্রাসীদের গুলিতে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন বাবলা নিহত হন; ওই ঘটনায় নেতাও আহত হন। পরদিন একই এলাকায় গুলিতে এক প্রতিবন্ধী রিকশাচালকও আহত হন। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই কমিশনার নতুন নির্দেশনা দেন।
হাসিব আজিজ বলেন, “দেখামাত্র ব্রাশফায়ার হবে — শুধুমাত্র অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের জন্য। নিরস্ত্র জনসাধারণের ওপর এটি প্রয়োগ করা হবে না। এমনকি যারা রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে ঝটিকা মিছিল করে, তাদের ওপর এটি প্রয়োগ করা হবে না — তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য সন্ত্রাসীদের নগরে প্রবেশের সাহসই কমানো। প্রকাশ্যে হত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে; এসব সন্ত্রাসীদের যেন আর সাহস না হয়, সেই উদ্দেশ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
কমিশনার বলেন, পুলিশের সদস্যদের আত্মরক্ষার আইনি অধিকার দণ্ডবিধির ধারা ৯৬ থেকে ১০৬ পর্যন্ত রয়েছে এবং প্রয়োজনে তিনি সমস্ত দায় গ্রহণ করবেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, “পেট্রোল পার্টি বা টহল পার্টির সম্মুখে কেউ অস্ত্র বের করলে — সেটা ধারালো অস্ত্র কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র — অস্ত্র বের করা মাত্রই গুলি করা হবে; এতে কোনো সন্দেহ নেই।”
এছাড়া কমিশনার আগের নির্দেশনাও স্মরণ করিয়ে দেন—আগস্টে বন্দরে পুলিশের ওপর হামলার পর তিনি বলেছিলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে যে অস্ত্রের প্রাধিকার ছিল, সেই অনুযায়ী থানার মোবাইল পার্টি, পেট্রোল পার্টি, ডিবি টিমসহ সব ফোর্স অস্ত্র ক্যারি করবে; লাইভ অ্যামুনিশন ছাড়া কোনো টহল বা মোবাইল পার্টি বাইরে যাবে না।
পুলিশসূত্র বলছে, নতুন নির্দেশনার মাধ্যমে দ্রুত সাড়া দিয়ে চেকপোস্ট বাড়ানো এবং টহল জোরদার করা হচ্ছে। নিরাপত্তা জোরদারের এই পদক্ষেপে নগরবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরবে কি না, তা সময় নিশ্চয়ই বোঝাবে — তবে প্রশাসন বলছে, সন্ত্রাস দমনে এ ধরনের কর্মসূচি জরুরি।
কথা বলতে পারেননি সরাসরি—সন্ত্রাস বিরোধী অপারেশন ও নিয়মিত গনসংযোগে পুলিশের কড়া অবস্থানজনিত এই নির্দেশকে সমর্থন ও সমালোচনা—উভয় দিক থেকেই মঙ্গলবারই নানা প্রতিক্রিয়া এসেছে। নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর ও মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা নির্দেশনার প্রয়োগের সময় সতর্কতার ওপর জোর দিতে পারে বলে আইনগত ও মানবিক বিবেচনার কথা বলা হচ্ছে।
আরএস
No comments yet. Be the first to comment!