জাতীয়

মেট্রোরেল যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিরলস এমআরটি পুলিশ

আপডেট: নভে ১২, ২০২৫ : ০৫:২৯ পিএম
মেট্রোরেল যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিরলস এমআরটি পুলিশ
ফাইল ছবি

রাজধানীতে মেট্রোরেলে যাতায়াতকারী যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও বিভিন্ন স্টেশনে সেবা দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) পুলিশ।

দ্রুত ও আধুনিক গণপরিবহনের নতুন যুগের প্রতীক মেট্রোরেল। প্রযুক্তিনির্ভর এই পরিবহন ব্যবস্থার নিরাপত্তা রক্ষায় এমআরটি পুলিশের ভূমিকা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২০১৯ সালে গৃহীত এক সিদ্ধান্তের আলোকে ২০২৩ সালের ২১ মে সরকার ২৩১টি পদ অনুমোদন দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এমআরটি পুলিশ গঠন করে। বর্তমানে ৫৫১ জন জনবল নিয়ে ইউনিটটি কাজ করছে। আধুনিক নগর পরিবহনে নিরাপত্তার নতুন ধারা তৈরি করাই ছিল এ ইউনিটের মূল লক্ষ্য।

এমআরটি পুলিশের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে—স্টেশনে মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে যাত্রী ও লাগেজ তল্লাশি, সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ, সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ এবং যেকোনো ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া প্রদান। পাশাপাশি জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দিতে তারা সর্বদা প্রস্তুত থাকে। এমআরটি পুলিশের ডিআইজি সিদ্দিকী তাঞ্জিলুর রহমান বলেন, প্রতিটি বগিতে সিসিটিভি থাকলেও অতিরিক্ত যাত্রীচাপের কারণে সব জায়গা ক্যামেরার আওতায় আসে না। এই সুযোগে সক্রিয় হয় চোরচক্র। তবে যাত্রীদের নিরাপত্তায় প্রতিটি স্টেশনে এমআরটি পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে।

তিনি আরও জানান, নারী ও শিশু যাত্রীদের সুরক্ষায় এমআরটি পুলিশ বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রতিটি স্টেশনে প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র, নার্স ও অ্যাম্বুলেন্স থাকা জরুরি বলে তিনি মত দেন। এছাড়া মায়েদের জন্য আলাদা ব্রেস্ট-ফিডিং বুথ স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন, যাতে নারী যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারেন।

মেট্রোরেল প্রকল্পে শুধু অবকাঠামো নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ সমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা শুরু থেকেই অনুভূত হয়। এজন্য নিরাপত্তার সঙ্গে প্রযুক্তিকে সমন্বিত করা হয়েছে। আধুনিক সিসিটিভি নজরদারি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নির্ভর পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা, ফেসিয়াল রিকগনিশন ও বায়োমেট্রিক সিকিউরিটি প্রযুক্তির সমন্বয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা রয়েছে।

সেন্ট্রালাইজড কন্ট্রোল রুম থেকে ওয়্যালেস ও মোবাইল কানেক্টের মাধ্যমে প্রতিটি ট্রেন, স্টেশন ও প্ল্যাটফর্মে ঘটনার তাৎক্ষণিক মনিটরিং করা সম্ভব হচ্ছে। প্রযুক্তি ও নিরাপত্তার এই সমন্বয় মেট্রোরেলকে করেছে আরও নির্ভরযোগ্য ও যাত্রীবান্ধব। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় পৌনে ৪ লাখ যাত্রী মেট্রোরেলে যাতায়াত করেন। যাত্রীচাপ ও কৌশলগত গুরুত্ব বিবেচনায় সরকার মেট্রোরেলকে ‘১(ক) শ্রেণির কেপিআই’ ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ এটি এখন জাতীয় নিরাপত্তার অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত স্থাপনাগুলোর একটি।

গত বছর কয়েকটি ছোটখাটো দুর্ঘটনা—যেমন স্টেশনে আগুন লাগা, গেট সিস্টেমে বিভ্রাট কিংবা বৈদ্যুতিক লাইনে ঘুড়ি আটকে পড়ার ঘটনা—মেট্রোরেলের ঝুঁকি ও প্রস্তুতির বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। তবে এসব ঘটনায় এমআরটি পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপে বড় দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত এমআরটি পুলিশ তাদের নিরাপত্তা কার্যক্রমে প্রশংসনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। এ সময় তারা—

৩৩৮ জন হারানো শিশুকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে, ১৯২ জন বৃদ্ধ ও নারী যাত্রীকে উদ্ধার করেছে, যারা ভিড়ে পরিবারের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিলেন, ৮৪৭টি মোবাইল, মানিব্যাগ ও মূল্যবান সামগ্রী উদ্ধার করে মালিকদের ফেরত দিয়েছে।

এছাড়া নিয়মিত তল্লাশিতে ১ কেজি ৩০০ গ্রাম গাঁজা ও ৭ বোতল বিদেশি মদ জব্দ করেছে এমআরটি পুলিশ। সম্প্রতি ট্রেনের ভেতরে পকেটমারি ও চুরির ঘটনা রোধে একটি বিশেষ টিমও গঠন করা হয়েছে। ডিআইজি সিদ্দিকী তাঞ্জিলুর রহমান বলেন, “যদি পর্যাপ্ত জনবল পাওয়া যায়, প্রতিটি বগিতে পুলিশ মোতায়েন সম্ভব হবে। তখন যাত্রীরা শতভাগ নিরাপত্তা পাবে।” বর্তমানে এমআরটি পুলিশের জন্য রয়েছে একটি বাস, একটি ট্রাক, একটি মাইক্রোবাস ও সীমিতসংখ্যক মোটরসাইকেল। পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রায় ১ হাজার ৯০০ জনবল প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য মেট্রোরেলকে এমন এক নিরাপদ, শৃঙ্খল ও আধুনিক গণপরিবহনে পরিণত করা, যেখানে প্রতিটি যাত্রী নিশ্চিন্তে যাতায়াত করতে পারে।”ঢাকা শহরে ছয়টি মেট্রোলাইন নির্মাণের কাজ চলছে, যার মধ্যে পাঁচটির কাজ চলমান। এটি সম্পন্ন হলে একটি সমন্বিত, পরিবেশবান্ধব ও সময়সাশ্রয়ী পরিবহন নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে। তবে এমআরটি পুলিশের সদস্যরা এখনো মেট্রোরেল পরিচালনা বা রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ে কোনো বিশেষ প্রশিক্ষণ পাননি। তারা প্রচলিত পুলিশি প্রশিক্ষণ নিয়েই দায়িত্ব পালন করছেন। ডিআইজি সিদ্দিকী তাঞ্জিলুর রহমানের মতে, উন্নত দেশগুলোর মেট্রো ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যৌথ প্রশিক্ষণ বা প্রশিক্ষণ বিনিময় কর্মসূচি চালু করা হলে এমআরটি পুলিশ আরও দক্ষ হয়ে উঠবে। এতে যাত্রীদের প্রতি সেবা, নিরাপত্তা এবং প্রযুক্তিগত ত্রুটি মোকাবিলায় সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।

 

আরএস

Tags:
মেট্রোরেল

০ মন্তব্য


No comments yet. Be the first to comment!