নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান সংলাপের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী স্পষ্টভাবে বলেছেন, নির্বাচনের আগে তিনি সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনায় যাবেন না।
আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত এ সংলাপে ইসির সাংবিধানিক অবস্থান স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। “ইসির ওপর জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার গুরুদায়িত্ব রয়েছে, মন্তব্য করেন তিনি। সরকারের সঙ্গে আলোচনায় ‘না’ বঙ্গবীর জানান, গত ১৫ মাস ধরে বর্তমান সরকারের ডাকে কোনো আলোচনায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি বজায় রেখেছেন। “নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে আলোচনায় যাওয়ার প্রশ্নই আসে না,” বলেন তিনি। ‘ইসির কাছে এখন সুযোগ’ কাদের সিদ্দিকী বলেন, অতীতে নির্বাচন কমিশন সরকারের ইচ্ছা পূরণ করেছে, যা ছিল অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে বর্তমান কমিশনের সামনে নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে করার সিদ্ধান্ত বড় একটি অসংগতি। গণভোটে যদি ৭০–৮০ শতাংশ ভোটার অংশ না নেয়, তবে জাতীয় নির্বাচনই হুমকির মুখে পড়বে। শেখ হাসিনা, রাজনৈতিক মূল্যায়ন ও কঠোর মন্তব্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা বিএনপি–জামায়াত বা অন্য কোনো শক্তির কারণে হয়নি, এটি আল্লাহর গজব। মানুষের অসন্তুষ্টি তৈরি হওয়ায় আজ এ পরিস্থিতি এসেছে। জামায়াতে ইসলামীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “খেলাফত আন্দোলনসহ ইসলামপন্থি দলগুলোকে আমি সম্মান করি। কিন্তু জামায়াত মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকায় জাতির কাছে ক্ষমা না চাওয়ায় তাদের সম্মান করা যায় না।”
পঞ্চগড় ও নির্বাচনি অভিজ্ঞতা নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিত হলে সন্ত্রাসীদের কোনো সুযোগ থাকে না। গত নির্বাচনে ২১টি কেন্দ্রে সিল করা ফলাফলে অসংগতি দেখেছি—৪টা ১৩ মিনিটে যেখানে ভোট ছিল ১,৭০৮। পরে তা হয়ে যায় ২,৬০০। ‘দেশকে বিভক্ত করেছে সরকার বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, “সরকার দেশটাকে একদম বিভক্ত করে ফেলেছে। শেখ হাসিনার পতন হলেও স্বাধীনতা–মুক্তিযুদ্ধ বিলুপ্ত হবে না।” তিনি অভিযোগ করেন, কিছু মহল শেখ হাসিনাকেই বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের সমার্থক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।
এনসিপিকে নিয়ে অভিযোগ বঙ্গবীর অভিযোগ করেন, এনসিপি মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু থেকে শুরু করে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিষয়ে অস্বীকারমূলক অবস্থান নিয়েছে।
‘বঙ্গবন্ধুই আমার রাজনৈতিক পিতা’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিজের রাজনৈতিক পিতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে দেশকে ভালোবাসতে শিখেছি।”
নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান সংলাপের শেষ দিকে নির্বাচন কমিশনের প্রতি তিনি বলেন, “আপনারা যদি জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারেন, তাহলেই দেশে শান্তি ফিরবে। আর শান্তি ফিরলে বাংলাদেশ সুইজারল্যান্ডের চেয়েও শান্ত দেশ হতে পারে।” তিনি নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক করে বলেন, “বেশির ভাগ ভোটারকে বাইরে রেখে ভালো নির্বাচন সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টাও করতে পারে।” কাদের সিদ্দিকীর মতে, দেশের স্থিতি ও ভবিষ্যৎ এখন অনেকটাই নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশনের সঠিক ভূমিকার ওপর।
আরএস
No comments yet. Be the first to comment!