গণভোটের রায় অমান্যকারীদের জনগণই প্রত্যাখ্যান করবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। আজ শনিবার রাজধানীর ফার্মগেটে ‘তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা’ বিষয়ক এক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আখতার হোসেন বলেন, ‘সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক দল চূড়ান্তভাবে গণভোটের বিরোধিতা করছে। তারা আগেও গণভোটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জনগণের মতামত অস্বীকার করেছিল। গণভোটের রায় যারা মানবে না, তারা মূলত জনগণের ম্যান্ডেট প্রত্যাখ্যান করছে। জনগণও তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।’
সংস্কার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, জুলাই সনদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দল ধোঁয়াশা তৈরি করছে। তাঁর দাবি, ‘সংস্কার প্রক্রিয়া সরকারের ইচ্ছেমতো ভাগ হওয়ায় জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।’
কৃষকের অধিকার–সংস্কার একই সূত্রে গাঁথা কৃষকদের অধিকারের প্রসঙ্গ তুলে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, কিছু দল গণভোটের আড়ালে কৃষকের অধিকারকে গৌণ করে দেখাচ্ছে। ‘গণভোট ও কৃষকের অধিকার—দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। সংস্কার আর কৃষকের অধিকার আলাদা কোনো বিষয় নয়, বরং একই সূত্রে গাঁথা।’ তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের উন্নয়নের বয়ানের আড়ালে কৃষকরা দীর্ঘদিন ঠকেছেন এবং ঋণের বোঝায় জর্জরিত হয়েছেন। তাঁর ভাষায়, ‘আওয়ামী লীগ নেতারা দেশে উন্নয়নের কথা বললেও টাকা বাইরে পাচার করেছেন। আমরা চাই নীতিনির্ভর বাংলাদেশ—যেখানে কৃষিই হবে মূল শক্তি।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে আখতার হোসেন বলেন, ‘৫ আগস্টের পরও সহিংসতা-মারামারি বন্ধ হয়নি। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’ ‘সারের সংকট চোরাচালান থেকে’ সেমিনারে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, দেশে কোনো আবাদি জমি খালি রাখা যাবে না। সরকারি–ব্যক্তিগত উদ্যোগে সব জমিতে চাষাবাদ নিশ্চিত করতে হবে।
সারের সংকটের জন্য তিনি চোরাচালানকে দায়ী করেন। ‘বাংলাদেশের সার মিয়ানমারে চোরাচালান হয়। ঘরে চোর থাকলে বাইরে চোরের প্রয়োজন হয় না।’ দুর্নীতি ও দখলদারিত্বের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রভাবশালী দখলদারদের কারণে খাল-নদী উদ্ধার কঠিন হয়ে পড়েছে। তাঁর মন্তব্য, ‘হাসিনাকে পালানোর দরকার নেই, তবে খাল–নদী উদ্ধার করতে গেলে দেশে গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে। কারণ, এসব জায়গা দখল করে রেখেছে প্রভাবশালীরা।’
‘কমিশনগুলো দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে’ গত ৫০ বছরে গঠিত বিভিন্ন কমিশনকে ‘দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী’ বলে মন্তব্য করেন হান্নান মাসউদ। তাঁর অভিযোগ, ‘দুর্নীতির কারণে কমিশনগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে কৃষিবিপ্লব হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক অর্থনীতি থেকে সরে আসতেই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে আনা হয়েছিল, কিন্তু তিনিও এস্টাবলিশমেন্টের চাপে আত্মসমর্পণ করেছেন।’
সাংবিধানিক সংকটের শিকড় ব্রিটিশ আমলে অনুষ্ঠানে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, দেশের সাংবিধানিক সংকটের মূল কারণ হলো ব্রিটিশ শাসনামলে তৈরি হওয়া সামাজিক–আইনি কাঠামো। ছাত্র রাজনীতি ও জাতীয় রাজনীতির ফারাক তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘জাতীয় রাজনীতি এখন গুন্ডা–চাঁদাবাজদের দখলে।’
কৃষিকে মূলধারায় আনার ওপর জোর দিয়ে সামান্তা বলেন, ‘কৃষিকে আলাদা খাত হিসেবে নয়, মূলধারায় নিতে হবে। এনসিপি চায়, একজন কৃষক যেন সংসদে যেতে পারেন, নিজের অধিকার নিয়ে কথা বলতে পারেন। কৃষিকে আধিপত্য থেকে মুক্ত করতে পারলেই কৃষিবিপ্লব সম্ভব।’
আরএস
No comments yet. Be the first to comment!