বিশেষ প্রতিবেদন

আজ ভয়াল সিডর দিবস

আপডেট: নভে ১৬, ২০২৫ : ০৫:২৯ এএম
আজ ভয়াল সিডর দিবস
ছবি : সংগৃহীত

আজ ভয়াল সিডর দিবস। দেড় যুগ আগে—২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর—সুপার সাইক্লোন সিডরের তাণ্ডবে মুহূর্তেই ওলট–পালট হয়ে যায় বাংলাদেশের উপকূলীয় জনপদ। ভয়াল জলোচ্ছ্বাস ও তীব্র ঝড়ে দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়। ভেসে যায় ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, আর অসংখ্য মানুষের জীবন।

আগামীকাল সেই মহাদুর্যোগের ১৮ বছর পূর্তি। এখনও দুঃসহ সেই রাতের কথা মনে করে আঁতকে ওঠেন বরগুনার মানুষ। ঝড়ের পর এত বছর কেটে গেলেও অনেকের মন থেকে মুছে যায়নি সিডরের ক্ষতচিহ্ন। বরগুনা জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সিডরে জেলায় ১ হাজার ৩৪৫ জনের মৃত্যু হয়; নিখোঁজ ১৫৬ জন। ঝড়ে মারা পড়ে ৩০ হাজার ৪৯৯টি গবাদিপশু এবং ৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৯টি হাঁস–মুরগি। জেলার ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬১টি পরিবার কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আর ৭৭ হাজার ৭৫৪টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়ন। সিডরের এক বছর আগেই এখানকার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ঘূর্ণিঝড়ের রাতে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস গ্রামগুলো তছনছ করে দেয়। ঝড় থেমে গেলে অর্ধশত মানুষের লাশ উদ্ধার করা হয়।

সিডরের পর কেটে গেছে ১৮ বছর। কিন্তু বরগুনার নদী–সাগর তীরবর্তী অনেক এলাকায় এখনো নির্মিত হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধ। ঝড় বা জোয়ারের সংকেত উঠলেই আতঙ্কে দিন কাটান উপকূলবাসী। ভাঙা বাঁধ দিয়ে লোনা পানি ঢুকে নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি, ভেসে যাচ্ছে মাছের ঘের।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, বরগুনার ২২টি পোল্ডারের আওতায় ৮০৫ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে—এর মধ্যে ৪৫০ কিলোমিটারই এখনো নিম্নমানের ও ঝুঁকিপূর্ণ। সম্প্রতি ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকার প্রকল্পে ১৩ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ, ৯ কিলোমিটার ঢাল সংরক্ষণ এবং ৫১ কিলোমিটার বাঁধ মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে। আরও ৫০ কিলোমিটার টেকসই বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হান্নান প্রধান বলেন, “কয়েকটি স্থানে নতুন টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। চলমান প্রকল্পগুলো শেষ হলে জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি কিছুটা হলেও কমবে।” উপকূলবাসীর আশা—সিডরের ১৮ বছর পর হলেও টেকসই নিরাপত্তা যেন আর বিলম্ব না হয়।


আরএস

০ মন্তব্য


No comments yet. Be the first to comment!