মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার আগ মুহূর্তে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমর্থকদের উদ্দেশে একটি অডিও বার্তা পাঠিয়ে জানান, অভিযোগগুলো মিথ্যা এবং তাকে রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চলছে। তিনি রায়কে গুরুত্ব দেন না এবং পুনরায় জনগণের কল্যাণে কাজ করবেন বলে আশ্বাস দেন।
৭৮ বছর বয়সী আওয়ামী লীগ সভাপতির অডিও বার্তায় বলা হয়, “এটা এত সহজ না। আওয়ামী লীগ শেকড় থেকে উঠে এসেছে, কোনো ক্ষমতাদখলকারীর পকেট থেকে না।” তিনি আরও বলেন, প্রতিবাদের ডাকের পর দেশজুড়ে সমর্থকেরা যেভাবে সাড়া দিয়েছেন, তা তাকে আশ্বস্ত করেছে।
হাসিনা অভিযোগ করেন, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার দলকে ‘শেষ করে দিতে’ চাইছে। গত বছরের ছাত্রবিক্ষোভের সময় সহিংসতার পর তিনি দিল্লিতে চলে যান এবং পদত্যাগ করেন। এরপর ইউনুস সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা শুরু করে।
তিনি সমর্থকদের বলেন, “চিন্তা করার কিছু নেই। আমি বেঁচে আছি, বেঁচে থাকব, আবার মানুষের কল্যাণে কাজ করব, আর বাংলাদেশের মাটিতেই বিচার করব।” এছাড়া তিনি ইউনুস সরকারের কাজের সমালোচনা করে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী জোর করে নির্বাচিত প্রতিনিধিকে অপসারণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
হাসিনা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও নাকচ করে বলেন, “আমি ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি, আর তারা আমাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ দেয়?” তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত বছরের ঘটনার সময় পুলিশ, আওয়ামী লীগ কর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হত্যার দায়ে অভিযুক্তদের সাধারণ ক্ষমা দিয়ে ইউনুস সরকার দায় নিজেই কাঁধে চাপিয়ে দিয়েছে।
রায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, “রায় দিক, আমার কিছু যায় আসে না। আল্লাহ আমাকে জীবন দিয়েছেন, আল্লাহই নেবেন। কিন্তু দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাব।” গণভবন ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “গণভবন আমার সম্পত্তি না, এটা সরকারি সম্পত্তি। তারা বলে এটা নাকি বিপ্লব। লুটেরা আর সন্ত্রাসীরা কোনো বিপ্লব করতে পারে না।” শেখ হাসিনা জানান, আদালতের রায় তাকে থামাতে পারবে না। “আমি জনগণের সঙ্গে আছি। আমি আমার কর্মীদের বলছি—চিন্তা কোরো না। সময়ের ব্যাপার মাত্র। তোমরা কষ্ট পাচ্ছ, আমরা ভুলব না, হিসাব হবে। আর আমি বিশ্বাস করি, আমি সেটা ফিরিয়ে দিতে পারব, ইনশাআল্লাহ।”
তিনি আরও বলেন, তার সরকারের সময়ে দেশের মানুষের জীবন বদলেছিল। বর্তমান পরিস্থিতির সমালোচনা করে যোগ করেন, “আজ বেকারত্ব বাড়ছে। আয় নেই। দেশে উৎপাদন নেই। শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক লুট হচ্ছে। বাংলাদেশকে এই পরিস্থিতি থেকে বের করতে হবে। সবাই ভালো থেকো। জয় বাংলা, জয় বাংলা, বাংলাদেশ।”
আরএস
No comments yet. Be the first to comment!